বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করে থাকে মানুষ। এই ভ্রমণকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পর্যটন শিল্প। অন্যদিকে মানুষের একে অপরকে জানার আগ্রহ থেকে ঘটেছে পর্যটন শিল্পের বিকাশ। আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের ভ্রমণ ও পর্যটন বাজার ১০.২৭%, নগদ বাজারের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৬১ এবং রাজস্ব ২ হাজার ১২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। তবে উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যা পর্যটন শিল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে অনেকেই লিখছেন এবং বলছেন। কারণ সবার প্রত্যাশা হলো, সমস্যাগুলো দূর হলে অনেকদূর এগিয়ে যাবে আমাদের পর্যটন শিল্প।
আমাদের রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যা ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন বাংলাদেশে রয়েছে, যা বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক সম্ভাবনার শিল্প হওয়া সত্ত্বেও অবকাঠামোগত দুর্বলতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং উন্নত পরিষেবা ও তথ্যের অভাব ইত্যাদি কারণে পর্যটন শিল্পে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। সমস্যাগুলো দূর করে কীভাবে এ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া যায় এখানে সে বিষয়ে লেখা হয়েছে।
আরও জানুনবাংলাদেশের পর্যটন খাতের সমস্যাসমূহ
অনেক সম্ভাবনাময় হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে প্রত্যাশিত কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখানে কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরা হলো:
- কাগুজে নীতিমালা: ১৯৯২ সালে জাতীয় পর্যটন নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে এবং ২০১০ সালে সেটি হালনাগাদও করা হয়। এখানে কক্সবাজার, সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান ঢেলে সাজানোর কথা বলা আছে। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ে চোখে পড়ার মতো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
- অবকাঠামোগত দুর্বলতা: বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প সেক্টরের অবকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। যোগাযোগ ব্যবস্থায় কিছু উন্নতি হলেও রয়েছে অনেক দুর্বলতা। অনেক জায়গায় রাস্তা সরু ও বিপজ্জনক। নেই পর্যাপ্ত আধুনিক হোটেল ও মোটেল।
- পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব: ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের পর্যটনকে শিল্পের স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এখনো উপেক্ষিত এ খাত। কখনোই পর্যটন খাতের জন্য বরাদ্দ হয়নি পর্যাপ্ত বাজেট। বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটন শিল্পের কিছু অগ্রগতি হলেও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে।
- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির অভাবে দেশে সব সময় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে। এ অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে বড় অন্তরায়।
- প্রচারের অভাব: আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো নানা সময় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো তুলে ধরে। কিন্তু এ অঞ্চলগুলোর তালিকায় নেই বাংলাদেশ। বিভিন্ন অঞ্চলের ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করে সেগুলো প্রচারের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
- নিরাপত্তার অভাব: বাংলাদেশের অনেকেই বিদেশি পর্যটকদের সংস্কৃতি সহজভাবে নিতে পারে না। অনেকেই তাদেরকে অপমান করে। দুষ্ট লোকের খপ্পরে পড়ে বিদেশি পর্যটকদের মূল্যবান জিনিসপত্র হারানোর ঘটনাও রয়েছে অনেক। ছিনতাই ও চুরি থেকে পর্যটকদের রক্ষা করতে হবে। পর্যটকদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা
দক্ষিণ এশিয়ার একটি চমৎকার দেশ হলো বাংলাদেশ। যেখানে পর্যটন শিল্পে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। নিচে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাগুলো উল্লেখ করা হলো:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। পুরো সৈকত বালুকাময় যেখানে কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। সৈকতের সাথেই রয়েছে শামুক ও ঝিনুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল সমৃদ্ধ বিপনি বিতান। সুইজ্যারল্যান্ডের ‘সেভেন ওয়ান্ডারারস ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক এ সৈকত বেশ কয়েকবার বিশ্বের প্রাকৃতিক নতুন সপ্তাশ্চার্য নির্বাচন প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থানে ছিলো। এ সৈকতের সৌন্দর্য দেশি বিদেশি সব পর্যটককে মুগ্ধ করে।
মিয়ানমারের উপকূলের কাছেই অবস্থিত এ প্রবালদ্বীপ। দ্বীপটিতে প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়রা এটিকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেন। দেশ-বিদেশের সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে এটি অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণে রয়েছে ছেঁড়া দ্বীপ । জোয়ারের সময় এখানে নৌকা প্রয়োজন হলেও ভাটার সময় হেটেই যাওয়া যায়। স্বচ্ছ পানি দেখতে এবং দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শীত মৌসুমে এখানে ঢল নামে মানুষের।
বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমির নাম হলো সুন্দরবন। এটি বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করেছে এটি। বনটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমির ও বাঘসহ অসংখ্য প্রাণীর আবাসস্থল। বনটির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতি বছর দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন।
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম দিকে রয়েছে ম্যানগ্রোভ ফাতরার বন, যা দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে পরিচিত। এখানে রয়েছে প্রাচীন কুপ। এটিই দেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উভয়টিই দেখা যায়। প্রতি বছর নৈসর্গিক এ সৈকত দেখতে ভিড় করেন হাজারো পর্যটক।
মালনীছড়া চা বাগান, জাফলং,লালখাল, তামাবিল, লোভাছাড়া চা-বাগান, লোভাছাড়া পাথর কোয়ারী, রায়ের গাঁও হাওর, বিছনাকন্দি ও রাতারগুলসহ অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট। প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে সিলেট সব সময় পর্যটকদের পদভারে থাকে মুখরিত।
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে রয়েছে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, আলুটিলা ও রিছাং ঝর্ণা, রহস্যময় সুড়ঙ্গ, দেবতার পুকুর ও শান্তিপুর অরণ্য কুটির। বান্দরবানে রয়েছে চিম্বুক পাহাড়, কেওক্রাডং, বগা লেক, তাজিংডং পাহাড়, নীলগিরি এবং রাঙ্গামাটিতে ঝুলন্ত সেতু। অকৃত্রিম এ সৌন্দর্য নজর কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।
পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে করণীয়
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সমস্যাগুলো যত দ্রুত সমাধান করা যাবে তত দ্রুত এ শিল্প সামনে এগিয়ে যাবে। সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে যা করতে হবে:
- পর্যটন স্পটগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা।
- যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা।
- দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য নিরাপদ আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা।
- জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিরসন করার প্রচেষ্টা করা।
- ট্যুরিজমের সাথে জড়িত সব ট্যুর অপারেটর ও গাইডদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
- বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে উদার মানসিকতা প্রদর্শন করা।
- পর্যটকদের জন্য সুযোগ সুবিধার কোনো প্রকার ঘাটতি না রাখা।
- প্রচার ও প্রসার বাড়ানো।
শেষকথা
আপনি কি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা ব্লগটি পড়ে কক্সবাজার ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করছেন? তাহলে আজই যোগাযোগ করুন ‘সাম্পান বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাফে’র সঙ্গে। এই রিসোর্টটি শতভাগ নিরাপদ এবং পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা ও সুযোগ দিয়ে থাকে। তাহলে দেরি না করে আজই বুক করুন আপনার কাঙ্ক্ষিত রুম।
বুকিং দিন: +8801974726726