যেভাবে পাবেন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার ট্রাভেল পাস
সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা বঙ্গোপসাগরের উত্তরপূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। দ্বীপটিতে প্রচুর নারিকেল গাছ থাকায় স্থানীয়ভাবে এটি "নারিকেল জিঞ্জিরা" নামে পরিচিত। প্রতি বছর অক্টোবর মাস থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। তবে এ বছরের চিত্র ভিন্ন।
চলতি বছর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে বেধে দেওয়া হয়েছে কিছু নির্দেশনা। নির্দেশনাগুলোর অন্যতম হলো, এখন থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে প্রয়োজন হবে ট্রাভেল পাস। ‘যেভাবে পাবেন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার ট্রাভেল পাস’, এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এ ব্লগে।
কীভাবে পেতে পারি সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ট্রাভেল পাস?
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের জন্য ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হয়। এটি একটি সহজ কাজ। কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করেই সেন্ট মার্টিন যাওয়ার ট্রাভেল পাস পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অ্যাপের মাধ্যমে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ
প্রথমে মোবাইলের প্লে স্টোর থেকে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক প্রস্তুতকৃত অ্যাপ ডাউনলোড করে নেওয়া। এরপর অ্যাপটিতে প্রবেশ করে জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নিবন্ধন নিশ্চিত করা। এ ট্রাভেল পাস দেখিয়ে টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজে ওঠা যাবে।
ট্রাভেল পাস পাওয়ার অস্থায়ী উপায়
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড তাদের প্রস্তুতকৃত অ্যাপটি অনুমোদিত জাহাজ মালিকদের হস্তান্তর করেছে। জাহাজের টিকেট কাটলেই ট্রাভেল পাস সংক্রান্ত বাকি কাজ জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো করে দিবে। বর্তমানে ট্রাভেল পাস দেওয়ার কাজ জাহাজ কর্তৃপক্ষ করলেও, অ্যাপ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলে অনলাইনেই মিলবে এ পাস।
যেভাবে সংগ্রহ করবেন জাহাজের টিকিট
জাহাজের টিকিট সংগ্রহ করার কয়েকটি মাধ্যম রয়েছে। এ মাধ্যমগুলো হলো:
- ১. জাহাজগুলোর ওয়েবসাইট থেকে টিকিট সংগ্রহ করা
- ২. জাহাজের গ্রাহকসেবার নম্বরে কল করে টিকিট বুকিং করা
- ৩. ট্রাভেল এজেন্টের সহযোগিতা নেওয়া
- ৪. জাহাজ ছাড়ার স্থান থেকে টিকিট ক্রয় করা
সেন্ট মার্টিন যেতে হলে মানতে হবে নির্দেশনা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে হলে পর্যটকদের এ নির্দেশনাগুলো মানতে বলা হয়েছে।
- ১. পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে না
- ২. একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দ্রব্য সাথে রাখা যাবে না
- ৩. হোটেল সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবগত করা (যে হোটেলে অবস্থান করবেন)
- ৪. দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো যাবে না (লাইটিং করা)
- ৫. শব্দ দূষণ সৃষ্টি করা যাবে না
- ৬. বার বি কিউ পার্টি করা যাবে না
সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ ও রাতযাপন করতে পারবেন। তবে নভেম্বরে যারা যাবেন তারা রাতযাপন করতে পারবে না।
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণকে আরামদায়ক এবং স্মরণীয় করতে সঠিক প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
- জাহাজের টিকিট নিশ্চিত করা: ভ্রমণের তারিখ নির্ধারণ করে আগেই জাহাজের টিকিট বুক করা।
- থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা: সেন্ট মার্টিনে থাকার জন্য হোটেল বা রিসোর্ট আগে থেকে বুকিং করে রাখা। বিশেষ করে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে হোটেল বা রিসোর্ট পাওয়া কঠিন হয়। তাই আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া।
- প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া: জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সাথে রাখা। জাহাজের টিকিট, ট্রাভেল পাস ও হোটেল বুকিংয়ের কাগজপত্র হাতব্যাগে নিয়ে নেওয়া।
- ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নেওয়া
- হালকা ও আরামদায়ক পোশাক
- সানস্ক্রিন, সানগ্লাস, এবং ক্যাপ
- পানির বোতল, স্ন্যাকস, এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ
- ক্যামেরা বা মোবাইল ফোনের পাওয়ার ব্যাংক
- পর্যাপ্ত ক্যাশ টাকা, কারণ দ্বীপে এটিএম সুবিধা সীমিত
- আবহাওয়ার খোঁজ খবর রাখা: যেহেতু নদী ও সমুদ্রপথের যাত্রা। তাই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে যাত্রা শুরু করা।
- সাবধানতা অবলম্বন করা: পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন নিরাপদ, তবে স্থানীয় পর্যটন গাইডের পরামর্শ মেনে চলা। শিশু ও বয়স্করা সঙ্গে থাকলে অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া।
সেন্ট মার্টিন যেতে যেতে যা দেখবেন
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের পথে নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্থাপনা ও স্থানীয় জীবনযাত্রা উপভোগ করতে পারবেন। পুরো যাত্রা অত্যন্ত মনোরম এবং পর্যটকদের জন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজারে পৌঁছানোর আগে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সমুদ্র সৈকতে সকালে হাঁটা, সূর্যাস্ত উপভোগ করা ও স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারেন।
টেকনাফ ভ্রমণ (কক্সবাজার থেকে টেকনাফ)
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে পাহাড়, নদী, ও সবুজ পরিবেশ নজর কাড়ে। পথে নাফ নদীর পাশ দিয়ে যেতে যেতে এক দিকে বাংলাদেশের এবং অন্য দিকের মিয়ানমারের দৃশ্য দেখতে পাবেন।
নাফ নদী
- টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদী পার হতে হয়।
- এই নদীর দুই পাশে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন এবং শান্ত পরিবেশ।
- নদীতে মাছ ধরার নৌকাগুলো দেখতে অত্যন্ত চমৎকার লাগে।
জাহাজ যাত্রার অভিজ্ঞতা
টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত জাহাজে যাত্রা আপনার ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ। জাহাজ থেকে সাগরের গভীর নীল পানি এবং ডলফিনের খেলা (সৌভাগ্যবান হলে দেখতে পাবেন)।
দ্বীপের কাছাকাছি প্রবাল অঞ্চল
জাহাজ সেন্ট মার্টিনে পৌঁছানোর আগে প্রবাল সমৃদ্ধ জলরাশির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। নীলচে-সবুজ পানির নিচে প্রবাল এবং নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী দেখতে পারেন।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রথম ঝলক
দ্বীপে পৌঁছানোর আগে দূর থেকে নারিকেল গাছের সারি এবং প্রবাল প্রাচীরের প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার মন কেড়ে নেবে। দ্বীপের সাদা বালির সৈকত ও ঝকঝকে নীল জলরাশির মিশ্রণ মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেবে।
আপনি কি সেন্ট মার্টিন যেতে চাচ্ছেন?
সাম্পান বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাফে কক্সবাজারের মধ্যে অন্যতম সেরা রিসোর্ট। আমাদের রিসোর্টটি মেরিন ড্রাইভের কাছেই অবস্থিত। একজন পর্যটকের আরামদায়ক অবস্থান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব সুবিধাই আমরা প্রদান করে থাকি। সেন্ট মার্টিনের পাশপাশি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা নিতে এখনই আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।